November 13, 2024, 10:02 pm

সংবাদ শিরোনাম
‘চার্জশিট থেকে নাম কাইটে দিমুনি’ বলা সেই যুবদল নেতাকে শোকজ জৈন্তাপুরে তামাবিল মহাসড়কে ৪ লেন প্রকল্পে নকশা পরিবর্তনের দাবীতে মানববন্ধন মোংলায় ভূমিদস্যু জাকির গাজীর বিচারের দাবিতে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ জাপা নেতা রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের ডাক দিয়ে লাপাত্তা আয়োজকরা, গণমাধ্যমে কথা বললেন ভুক্তভোগীরা উলিপুরে হাতিয়া গণহত্যা দিবস পালিত পার্বত্য বান্দরবানের পিছিয়ে পড়া শিশু ও নারীদের শিক্ষায় এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে ম্যাটাডোর গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব এ্যডভোকেট মোঃ শাহালম নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে কারসাজিতে সাকিবের আয় ৯০ লাখ, জরিমানা ৫০ লাখ পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন সভ্যতা গড়ার বার্তা ড. ইউনূসের সরকার যত দিন চাইবে, তত‌দিন মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল: রিজভী

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল: রিজভী

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা সৎমায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন -এমন অভিযোগ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে রিটার্নিং কর্মকর্তারা বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন রিজভী। রুহুল কবির রিজভী বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকে এনে বৈঠক করে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গণহারে বাতিল করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপত্রে অসংখ্য ত্রুটি থাকার পরও সেগুলোকে বাতিল করা হয়নি। দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হওয়া ও তথ্য গোপনের অভিযোগ থাকার পরও সরকারি দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হায়াত উদ দৌলা খানের কার্যালয়ে রোববার মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রমে মনোনয়ন বাতিল হওয়া বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ কোনো প্রার্থীকে কথা বলার সুযোগ দেননি তিনি। নির্বাচনি আচরণবিধির বিধান হচ্ছে, প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তা হলে তাঁদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। কোনো ডকুমেন্টস উপস্থাপন করতে চাইলে তা করতে দিতে হবে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি শুরুতেই প্রার্থীকে থামিয়ে দেন, তা হলে বুঝতে হবে রিটার্নিং কর্মকর্তা দুরভিসন্ধি নিয়ে কাজ করছেন। এভাবে সারা দেশেই রিটার্নিং কর্মকর্তারা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিএনপির মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া চলবে না। কিন্তু যদি রিটার্নিং কর্মকর্তা বা নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত অন্য কোনো কর্মকর্তা কোনো রাজনীতিক দলের স্বার্থের পক্ষে কাজ করেন, তা হলে তা হবে গুরুতর অসদাচরণ। এটি সমগ্র নির্বাচন কমিশনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচন কমিশন, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচনে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের ভোটে নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়, জনমনে শঙ্কা ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি দেশব্যাপী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কর্মকা-ে নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটবে কি না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত রিটার্নিং কর্মকর্তারা যা করছেন, তা কেবলই প্রহসন। রিজভী বলেন, আয় কমে গেলেও ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-নেতাদের সম্পদ বাড়ে, অথচ এগুলোতে দুদক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আসন্ন নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও দেশব্যাপী গভীর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের আগ্রাসী তৎপরতা ও নির্বিচারে দেশব্যাপী বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার অভিযানে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনেরই ছবি মানুষ দেখতে পাচ্ছে। যেন পাতানো কিছু একটা করতে যাচ্ছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। স্বৈরশাসিত এই দেশে আগামি দিনে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধঃপতনের লক্ষণগুলোই ফুটে উঠছে। তবে এবারের নির্বাচন নিয়ে জনবিরোধী কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে এই অবৈধ আধিপত্য অভিলাষী সরকার নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে আনবে। ভোটারদের বঞ্ছিত করে ভাগ্নে শাহজাদাদের বিজয়ী করার নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী পুলিশের ওপর নির্ভরপরায়ণ ও সামর্থ্যহীন। সুতরাং গণভিত্তি নেই বলেই এদের পতন অত্যাসন্ন। তিনি বলেন, এখন যা কিছু হচ্ছে তার জন্য দায়ী নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ সরকারের যে মনোভাব, সেই মনোভাব কমিশন আন্তরিকতার সাথে পালন করছেন। শুধমাত্র বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করতে হবে, এলাকা জনশূন্য করতে হবেৃ এটা করলে পরেই সরকারের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। নির্বাচন কমিশন সেই স্বার্থ রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছেন। দন্ড পাওয়া ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রিজভী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির ক্ষেত্রে আইনের ভিন্ন প্রয়োগ হচ্ছে বলেও তিনি সমালোচনা করেন। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের স্বার্থে আইন এক ধরনের ও বিএনপির ক্ষেত্রে আইন আরেক ধরনের? রিজভী বলেন, হাইকোর্টে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আমানউল্লাহ আমানসহ বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন নাকচ হওয়ার দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, কারো দন্ড হলে আপিল বিচারাধীন থাকলেই চলবে না, এমনকি আপিলে মুক্তি পেলেও নিস্তার নেই। কারণ সংবিধান অনুযায়ী দন্ডিত ব্যক্তিকে মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এরপর তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে যোগ্য হবেন। এখন আমাদের প্রশ্ন, অ্যাটর্নি জেনারেলের এই ব্যাখ্যা যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তা হলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং কক্সবাজারের সাংসদ আবদুর রহমান বদির সংসদ সদস্য পদ কি অবৈধ নয়? রিজভী আরো বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে সংবিধান ও আইনের ব্যাখ্যা দেন সরকারপ্রধানকে খুশি করার জন্য। মঈনুদ্দিন, ফখরুদ্দীনের আমলে ২০০৭-০৮ সালে ক্যাঙ্গারু কোর্টে বিএনপির যে নেতারা দন্ডিত হয়েছিলেন, তাঁদের আপিল বিচারাধীন থাকলেও তাঁদের সবার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। অথচ ওই ক্যাঙ্গারু কোর্টে দন্ডিত ও সাজা স্থগিত না থাকা অবস্থায় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ১৩ বছরের সাজা নিয়ে শুধু আপিল করে এখনো এমপি হিসেবে বহাল আছেন হাজি মোহাম্মদ সেলিম। তাঁর মনোনয়নপত্রও বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়ন বাতিলের বিষয়ে রিজভী বলেন, আমিনুল হকের দুটি মামলার বিচারিক আদালতে সাজা হাইকোর্ট বাতিল করে দেন। আপিল বিভাগও তা বহাল রাখেন। এসব তথ্য তিনি হলফনামায় দেওয়ার পরও তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এখন বাতিলের সার্টিফায়েড কপিও তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। মূলত রিটার্নিং কর্মকর্তারা সরকারের নির্দেশই পালন করছেন। আর সরকারের নির্দেশেই বিএনপি নেতাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ পল্টন থানা বিএনপির সভাপতি লোকমান হোসেন ফকিরকে গত রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোথাও তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আটকের বিষয়টি অস্বীকার এখন সীমা অতিক্রম করেছে। আমি অবিলম্বে লোকমান হোসেন ফকিরকে সুস্থাবস্থায় তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাসেলকে কয়েক দিন আগে তুলে নেয়ার পর, আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গতকাল (সোমবার) কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুজ্জামান মঞ্জুসহ দুজনকে তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নাশকতার মিথ্যা মামলা করেছে পুলিশ। আগামি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নাকি নাশকতার পরিকল্পনা করছে, এই অজুহাতে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের নামে কোনো ওয়ারেন্ট ছিল না। আমি পুলিশ কর্তৃক অধ্যাপক নুরুজ্জামান মঞ্জুসহ দুজনকে গ্রেফতার ও নাশকতার মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে অসত্য ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ও মো. রিপনকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, মামুন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন ও মাশুকুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর